মিয়ানমারে সমালোচনার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
আজ শনিবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত দেশটির দূতাবাসে বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের নাগরিক আগাম ভোট দিয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সকালে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ব্যাংকক দূতাবাসে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম ২ ঘণ্টায় ২৫ জনকে ভোট দিতে দেখা গেছে।
ভোট দিতে আসা ৪২ বছর বয়সী মো মো লুইন এএফপিকে বলেন, ‘আশা করি নির্বাচনের পর শান্তি আসবে।’
প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসা নির্মাণশ্রমিক কুন কিয়াও সোয়ে বলেন, ‘আমি ভোট দিতে এসেছি কারণ আমি শান্তি চাই। মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই।’
থাইল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ব্যাংককেই মিয়ানমারের প্রায় ৫ লাখ নথিভুক্ত নাগরিক বসবাস করেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, পুরো থাইল্যান্ডে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ৪১ লাখ।
থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই নাগরিকদের একটি বড় অংশই নথিহীন এবং যুদ্ধের কারণে পালিয়ে আসা।
দূতাবাস কর্মকর্তারা জানান, কতজন আগাম ভোটের জন্য আবেদন করেছেন সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। ভোটার নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল ১৫ অক্টোবর।
ভোটের সুযোগ সীমিত
নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বাদ পড়া রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক এবং জান্তা বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এ নির্বাচনকে সামরিক শাসনকে আড়াল করার একটি ‘নাটক’ বলে দাবি করেছেন।
জাতিসংঘও এ নির্বাচনকে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি ‘কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাইল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এক শিক্ষার্থী নির্বাচনে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এএফপিকে বলেন, ‘এটি ভুয়া আয়োজন, যেখানে বেসামরিক নাগরিকরা নিপীড়িত, বাস্তুচ্যুত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আশা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা চাপ অনুভব করবে বা ভোট দিতে বাধ্য হবে, শুধু তারাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।’
থাইল্যান্ডে বসবাসকারী মিয়ানমারের বেশিরভাগ মানুষ এ নির্বাচন মানে না বলেও জানান ওই শিক্ষার্থী।
ব্যাংকক ছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশে মিয়ানমার দূতাবাসে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৬ ও ৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় ও থাইল্যান্ডে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আগাম ভোট দিতে পারবেন নাগরিকরা।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই সময়ে আগাম ভোট চলবে।
২০২১ সালে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ-সংঘাতে বিধ্বস্ত মিয়ানমার। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে শান্তি ও গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেনা সরকার।
গত ২৮ নভেম্বর জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র বলেন, ‘এ নির্বাচন মিয়ানমারে মেরুকরণ, বিভাজন ও অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়াবে।’
