ওপেনএআই সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের ৮০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক এক পাঁচ শতাংশ মানুষ প্রতি সপ্তাহে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আবেগনির্ভর কথোপকথন করেন। সংখ্যাটি খুবই ছোট মনে হলেও অঙ্ক ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষের সমান।
ম্যাশেবলের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের ব্যবহারকারীরা সম্ভবত চ্যাটজিপিটির সঙ্গে এমনভাবে কথা বলেন, যা তাদের একাকীত্ব বাড়ায় ও প্রযুক্তির ওপর মানসিক নির্ভরতা তৈরি করে। এতে তাদের সামাজিক সম্পৃক্ততা কমে যায়।
ওপেনএআই বলছে, তাদের ডিফল্ট মডেল ব্যবহারকারীদের বাস্তব জীবনের গুরুত্ব বুঝতে উৎসাহিত করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চ্যাটজিপিটি সব সময় ব্যবহারকারীর যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকে।
ম্যাশেবল বলছে, অনেকে যেকোনো সমস্যা নিয়ে চ্যাটজিপিটির কাছে প্রশ্ন করেন। এই প্রবণতা ব্যবহারকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইতোমধ্যে এ ধরনের ইস্যুতে একাধিক পরিবার মামলাও করেছে। এসব পরিবারের অভিযোগ, তাদের কিশোর সন্তান বা প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়রা অতিরিক্ত চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সময় বা পরে আত্মহত্যা করেছেন। কিংবা তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
এআই বিশেষজ্ঞরা ম্যাশেবলকে জানিয়েছেন, এই নির্ভরতা থেকে নিরাপদ থাকতে হলে স্পষ্ট সীমারেখা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
প্রশিক্ষক ও উদ্যোক্তা জে বিদ্যার্থী বলেন, প্রযুক্তির একটি নিজস্ব ভাষা মডেল থাকে, যা বুঝতে পারা ব্যবহারকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এআইয়ের এই মডেল ভাষা ভালোভাবে বুঝতে পারলে, মানুষ নিজের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে এআইকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে নিরাপদ সম্পর্ক রাখা যেমন সম্ভব, তেমনি চ্যাটবটের সঙ্গেও নিরাপদ সম্পর্ক রাখা সম্ভব।
কীভাবে নিরাপদে চ্যাটবট ব্যবহার করতে হবে, এখানে তার ৫টি উপায় তুলে ধরা হলো।
সাধারণত কোনো প্রশ্ন করা হলে, চ্যাটজিপিটি খুব স্মার্ট ও আবেগময় প্রতিক্রিয়া বা উত্তর দিয়ে থাকে। অথচ চ্যাটবট কোনো সচেতন সত্তা নয়। আর সমস্যাটা এখানেই! মানুষ না বুঝে এটিকে মানুষের মতো বন্ধু বা সঙ্গী ভাবতে শুরু করে। তখনই ব্যবহারীর জন্য চ্যাটবট বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
বিদ্যার্থী বলেন, ‘চ্যাটবট কথোপকথনের পরের শব্দ অনুমান করে উত্তর তৈরি করে। মাঝে মাঝে এটি ভুল বা অদ্ভুত তথ্যও দিয়ে থাকে। ব্যবহারকারীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চ্যাটবটের ভাষা বুঝতে হবে। তাহলে এআই থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
এআই বিশেষজ্ঞ সল রাশিদি প্রতিদিন এআই ব্যবহার করেন। কিন্তু নিয়মের ব্যাপারে তিনি বেশ কঠোর।
তিনি বলেন, ‘আমি এআইকে আমার হয়ে ভাবতে দিই না। আমি শুধু বিরক্তিকর বা সময়সাপেক্ষ কাজগুলো দ্রুত করতে এআই ব্যবহার করি। যেমন, অফিসের কনটেন্টকে সহজে ব্যাখ্যা করা। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এআই ব্যবহার করি। আমার চিন্তার নিয়ন্ত্রণ তাকে নিতে দিই না।’
এআই সব সময় দ্রুত ও প্রশংসামূলক উত্তর দিয়ে থাকে। তাই অনেকেই ছোট ছোট সিদ্ধান্তের কথাও চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চান। এআই বিশেষজ্ঞ ড. রেনে রিচার্ডসন গসলাইন সতর্ক করেন, ‘কেউ যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি এআইকে দিয়ে দেয়, তাহলে নিজের চিন্তার সক্ষমতা কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে নিজে ভাবুন, তারপর এআইয়ের মতামত নিন। তাহলে ভালো-মন্দ নিজেই বুঝতে পারেন।’
মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মতবিরোধ, আলোচনা থাকে। এটি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু চ্যাটবট সম্পূর্ণ বিপরীত। এই প্রযুক্তি সবসময় ব্যবহারকারীর মতকে সমর্থন দিয়ে থাকে এবং প্রশংসা করে।
গসলাইনের ভাষায়, এটি একটি স্লাইডের মতো, যেখানে নামা সহজ, কিন্তু পড়ে গেলে ওঠা কঠিন।
তাই চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকে পড়ান মানে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া।
ভুলে গেলে চলবে না, এআই প্রশংসা করলে তাতে কিছুক্ষণের জন্য ভালো লাগতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর কোনো উপকারিতা নেই। বরং এআইয়ের প্রশংসা পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
এজন্য এআইকে দরকারি তথ্য পেতে ব্যবহার করুন, নিজের প্রশংসা শোনার জন্য নয়।
যদি মনে হয়, আপনি টানা চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছেন। তাহলে এটা সতর্ক সংকেত।
বিদ্যার্থী বলেন, চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার সময় কিছু বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন—কেন বট অতিরিক্ত উৎসাহ দেখাচ্ছে? তার কথায় আপনার কী মনে হচ্ছে?’
তিনি মনে করেন, চ্যাটবট মানুষের মতো নয়, তাই একে একটি স্মার্ট জার্নাল হিসেবে দেখা উচিত। এটি আপনাকে তথ্য দেবে, কিন্তু নিজের ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।’
অভিজ্ঞ এআই নির্বাহী সল রাশিদি ম্যাশেবলকে বলেন, ‘এআইয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হলে মানুষ নিজে চিন্তা করা বন্ধ করে দেয়।’
