আফ্রিকার দেশ সুদানে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১৬ জন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪৬ জনই শিশু, যাদের অধিকাংশই স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী।
সাউথ করদোফান রাজ্যের কালোগি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন, সুদানের সেনাবাহিনী-সমর্থিত সূত্র এবং চিকিৎসক সংগঠনগুলোর বরাতে কাতারের গণমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানায়।
কালোগির নির্বাহী পরিচালক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আরএসএফ প্রথম হামলা চালায় ওই কিন্ডারগার্টেনটিতে। হামলার পর আহতদের সহায়তা করতে আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাদের ওপর দ্বিতীয় দফায় ড্রোন-বোমা হামলা চালানো হয়। এতে হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।
সুদানিজ আর্মড ফোর্সেসের (এসএএফ) দুটি সামরিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, হামলায় শহরের হাসপাতাল এবং একটি সরকারি ভবনও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এলাকাজুড়ে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি ‘ইচ্ছাকৃত আত্মঘাতী ড্রোন হামলা’ ছিল। বেসামরিক মানুষ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। সংগঠনটি হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইউনিসেফের সুদান প্রতিনিধি শেলডন উয়েত বলেন, ‘বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুদের হত্যা করা শিশু-অধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্য উদাহরণ।’ তিনি সংঘাতে জড়িত সব পক্ষকে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও হামলা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান।
আল-জাজিরার খার্তুম প্রতিনিধি হিবা মরগান জানান, আহতদের চিকিৎসা পেতে ব্যাপক বাধার কারণে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কোরদোফান অঞ্চল সেনাবাহিনী ও আরএসএফের তুমুল লড়াইয়ের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
গত মাসে দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহর পতনের পর সেনাবাহিনীর জন্য কোরদোফান কৌশলগতভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলটি পশ্চিমে আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর এবং পূর্ব ও উত্তরের সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। ফলে উভয়পক্ষের জন্য সেনাঘাঁটি ও রসদ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হিসেবে কাজ করে।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন তৃতীয় বছরে পড়েছে। এ যুদ্ধ ইতোমধ্যেই দশ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ৯০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরও তিন কোটি মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সতর্ক করেছেন, কোরদোফানে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এটি দারফুরের এল-ফাশেরে সংঘটিত ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির মতো হতে যাচ্ছে। গত অক্টোবর থেকে শুধু কোরদোফানেই অন্তত ২৬৯ বেসামরিক মানুষের হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত হয়েছে।
